#we_love_Mohamma
রুহের জগতে প্রিয় নবীর প্রতি সকল নবীগণের আনুগত্যের অঙ্গীকার।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীবের মার্যাদাকে এতো উচ্চে স্থান দিয়েছেন যা আর কাউকে দেননি। তাইতো রুহের জগতে সকল নবীগণের কাছে থেকে প্রিয় হাবীবের ব্যাপারে অঙ্গীকার গ্রহণ করেন এই মর্মে যে, তাঁরা সকলে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তাঁর আনুগত্য করবে। সেই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে পবিত্র কোরআনের সুরা আল ইমরানের ৮১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا اتَيْتُكُمْ مِّنْ كِتبٍ وَّحِكْمَةٍ ثُمَّ خَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِه وَلَتَنْصُرُنَّ
অর্থাৎ- “(হে প্রিয় নবী! স্মরণ করুন, ঐ সময়ের ঘটনা) আর যখন আল্লাহ তায়ালা সকল নবীদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলেন এই বলে যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হেকমত যা দান করেছি, অতঃপর তোমাদের নিকট তোমাদের প্রাপ্ত এগুলোর সত্যতা প্রতিপাদনকারী কোন রাসুল আগমন করলে তোমরা অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে তাঁর দ্বীনের দাওয়াতী কাজে অবশ্যই সহযোগীতা করবে। তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আমার এ কথার উপর ওয়াদা করছ এবং আমার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে নিয়েছ? তাঁরা সকলে সমস্বরে বললেন, আমরা অঙ্গিকার করছি। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা নিজেরা সাক্ষী থাকো আর আমি নিজেও তোমাদের সাক্ষী হয়ে রইলাম।”
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সকল নবীগণের আনুগত্যের আরেকটা দৃষ্টান্ত দেখা যাবে কেয়ামতের ময়দানে। সকল মানুষ যখন বিভিন্ন নবীর কাছে সুপারিশের জন্য যাবে, তখন সকল নবীগণ সুপারিশের ব্যাপারে তাঁদের নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করবেন এবং হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সুপারিশের জন্য যেতে বলবেন। এর মাধ্যমে সেদিন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সকল নবীর আনুগত্যের চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।
আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি “আনোয়ারে মোহাম্মদীয়া” কিতাবে উল্লেখ করেন-
لَمَّا خَلَقَ اللهُ ادَمَ جَعَلَ ذلِكَ النُّوْرَ فِي ظَهْرِه فَكَانَ يَلْمَعُ فِي جَبِيْنِه
অর্থাৎ- “যখন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে পয়দা করলেন, তখন ঐ নূরে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পৃষ্ঠে স্থাপন করলেন। সে নূর তাঁর ললাট দেশে চমকাতো।”
“আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া” গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর লিখেন- “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন জান্নাতে ছিলেন, তখন আপনি কোথায় ছিলেন? হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আদমের ঔরসে। তারপর নূহ আলাইহিস সালাম তার ঔরসে আমাকে ধারণ করে নৌকায় আরোহন করেছিলেন। তারপর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পৃষ্ঠদেশে। তারপর পবিত্র মাতা পিতাগণের মাধ্যমে আমি পৃথিবীতে আগমন করি। আমার পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে কেহই চরিত্রহীন ছিলেন না।”
সুতরাং হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরগণ ছিলেন প্রিয় নবীর বাহন। ইমাম কাসতুলানি “মাওয়াহেবুল লাদুনিয়াতে” উল্লেখ করেন- হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও বিবি হাওয়া আলাইহাস সালামের জোড়ায় জোড়ায় সন্তান হতো। প্রতিবারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করতো। এভাবে বিশ জোড়া সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা। কিন্তু যখন হযরত শিষ আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করলেন, তখন তিনি একা জন্মগ্রহণ করেন। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূর মোবারক হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে হযরত শিষ আলাইহিস সালামের মধ্যে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে হযরত শিষ আলাইহিস সালাম একা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হযরত আদম আলাইহিস সালাম নিজপুত্র হযরত শিষ আলাইহিস সালামকে অসিয়ত করেছিলেন যে তিনি যেন ঐ নূরের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করেন এবং বংশ পরম্পরায় যেন পবিত্র নর নারীগণের মাধ্যমে ঐ নূর স্থানান্তরিত করা হয়। হযরত আদম আলাইহিস সালাম শিষ আলাইহিস সালামকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন- আমি বেহেশতের প্রতিটি দরজায় এবং হুর ও ফিরিশতাদের স্কন্ধ দেশে আল্লাহর নামের সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম মোহরাঙ্কিত দেখেছি। সুতরাং তুমি যখনই আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে তার সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামও উল্লেখ করবে। পুত্রের প্রতি হযরত আদম আলাইহ ওয়াসাল্লামের এই অসীয়ত শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলেছিলো, যতক্ষণ না আল্লাহ পাক আব্দুল মুত্তালিব ও তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহকে এই নূর মঞ্জুর করেন। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষদের বংশপরম্পরাকে পুতঃপবিত্র রেখেছিলেন।
নূরে মোহাম্মদী হযরত আদম আলাইহিস সালামের সাথে পৃথিবীতে আসার পর হযরত শিষ, হযরত ইদ্রিস, হযরত নূহ, হযরত ইব্রাহিম ও হযরত ইসমাইল প্রমুখ পয়গাম্বর ও নেকককারগণের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে হতে সেই নূর আবদুল মুত্তালিবের কাছে পৌছালো। বর্ণিত আছে তখন আবদুল মুত্তালিবের শরীর থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মেশকের সুঘ্রাণ বের হতো, আর তার ললাট হতে উজ্জ্বল প্রভা ছড়াতো নূরে মোহাম্মদী। আবদুল মুত্তালিব যখন বাদশাহ আবরাহার মুখোমুখি হন, তখন বাদশাহর সেনাবাহিনীতে সর্ববৃহৎ সাদা হাতিটি তার মুখের দিকে তাকিয়ে উট যেভাবে হাটু গেড়ে নত হয় ঠিক সেভাবে নত হয়ে যায় এবং সেজদা করে। আল্লাহ তায়ালা সেই প্রাণিকে বাকশক্তি দেন এবং সে বলে, “ওহে আবদুল মুত্তালিব, আপনার ঔরসে নূর এর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।” (মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যা)
সব নবীদের রুহু গুলো
আনুগত্যের দেয় স্বীকৃতি,